অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যেসব বিপদ আপনি ডেকে আনছেন

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে পিঠ ও কোমরের ব্যথা এখন এক সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকাটা এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আগে যেখানে এটি কেবল বয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত, এখন সেখানে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের মাঝেও এ ধরনের সমস্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
❗দীর্ঘ সময় বসে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব
একই ভঙ্গিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যেমন:
পিঠ ও কোমরের ব্যথা
মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ
ঘাড়ে টান ও ব্যথা
চোখে চাপ পড়া ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
রক্ত সঞ্চালন হ্রাস পাওয়ায় স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
হৃদরোগ ও মানসিক চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা
কীভাবে রক্ষা পাবেন এই বিপদ থেকে?
📌 ১. সঠিক ভঙ্গিতে বসা
মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন
হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে পা মেঝেতে রাখুন
পিঠের নিচে ছোট বালিশ ব্যবহার করতে পারেন
চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে শরীর আরাম বোধ করে
❗ মনে রাখবেন, ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো, দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে থাকা, হঠাৎ ঝুঁকে কাজ করা ও ভারী ওজন তোলা – সবই পিঠের চাপে জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
📌 ২. নিয়মিত বিরতিতে নড়াচড়া করুন
প্রতি ৩০ মিনিটে ২–৩ মিনিট দাঁড়িয়ে একটু হাঁটুন
সামান্য স্ট্রেচ করুন
স্ক্রিন যেন চোখের সমান উচ্চতায় থাকে সেটি নিশ্চিত করুন
📌 ৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন মাত্র ১০–১৫ মিনিট সময় দিলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিচের ব্যায়ামগুলো বিশেষভাবে উপকারী:
ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ – মেরুদণ্ড নমনীয় করে
চাইল্ড’স পোজ – পেশী শিথিল করে
ব্রিজ এক্সারসাইজ – কোমরের পেশীকে শক্তিশালী করে
📌 ৪. ভারী কোনো জিনিস তোলার সময় সতর্ক থাকুন
সর্বদা হাঁটু ভেঙে বসে ওজন তুলুন
পিঠ বাঁকাবেন না
ওজনটি শরীরের যতটা সম্ভব কাছাকাছি রাখুন
📌 ৫. মেঝেতে বসার অভ্যাস গড়ুন
মেঝেতে বসে খাওয়া বা পড়াশোনা করলে শরীর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকে। পাতলা চাদর বা মাদুর ব্যবহার করে বসলে মেরুদণ্ডে কম চাপ পড়ে এবং পেশিগুলোর স্বাভাবিক প্রসারণ ঘটে।
📌 ৬. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন
সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
🩺 চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন
যদি দীর্ঘ সময় ধরে পিঠ বা কোমরের ব্যথা থাকে, কিংবা ব্যথা তীব্র হয় – সেক্ষেত্রে দেরি না করে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসক এমআরআই বা অন্যান্য পরীক্ষা করাতে বলতে পারেন।
শেষ কথা
অফিসে কাজ করেই আমাদের জীবন ও জীবিকা—তাই কাজ থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকলে অনেক শারীরিক সমস্যা রোধ করা সম্ভব। সঠিক জীবনযাপন, সচেতন ভঙ্গি ও প্রয়োজনীয় ব্যায়ামই পারে আপনাকে ব্যথামুক্ত সুস্থ জীবন উপহার দিতে।