হঠাৎ জ্বর? সেরে উঠতে যা করবেন

হঠাৎ করে জ্বর আসা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। এটি কোনো নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়, বরং আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা বা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট একটি উপসর্গ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণই জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এসব জীবাণু যখন আমাদের দেহে আক্রমণ করে, তখন শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে—এটিই জ্বর। যদিও জ্বর অস্বস্তিকর, তবে এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ জ্বর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কিছুদিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে দ্রুত আরাম পেতে ও শরীরকে সহায়তা করতে কিছু ঘরোয়া যত্ন অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নিই জ্বর হলে কী করবেন—
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
জ্বর হলে শরীর দুর্বল অনুভব করে ও কর্মস্পৃহা কমে যায়। এ সময় কাজ বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করে নিজের শরীরকে বিশ্রাম দিন। বিশ্রাম শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। শুয়ে বিশ্রাম নেওয়া, হালকা গরম স্যুপ পান করা এবং আরামদায়ক পরিবেশে থাকা জ্বর থেকে সেরে ওঠার পথ সহজ করে।
২. প্রচুর তরল পান করুন
জ্বরের কারণে ঘাম হওয়া, বমি বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) তৈরি করে। তাই বেশি করে পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, মধু মেশানো উষ্ণ পানি বা ডিক্যাফিনেটেড চা পান করুন। মুরগি বা গরুর মাংসের ঝোলও অনেক উপকারী, কারণ এতে প্রোটিন ও ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা শরীরকে পুষ্টি জোগাতে এবং হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে।
৩. হালকা গরম পানিতে গোসল করুন
জ্বরের সময় অনেকেই ঠান্ডা অনুভব করেন, ফলে গোসল না করেই শুয়ে থাকেন। তবে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কিছুটা আরামও পাওয়া যায়। তাই জ্বর হলেও দিনে অন্তত একবার হালকা গরম পানিতে গোসল করার চেষ্টা করুন।
৪. ঢিলেঢালা ও হালকা পোশাক পরুন
জ্বর হলে ভারি কম্বল জড়ানো কিংবা বেশি কাপড় পরে শুয়ে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে দেহের তাপমাত্রা আরও বাড়ে। তাই ঢিলেঢালা, আরামদায়ক এবং পাতলা কাপড় পরুন। সম্ভব হলে ভারী কম্বলের বদলে একটি হালকা চাদর ব্যবহার করুন।
৫. পুষ্টিকর খাবার ও ভেষজ উপাদান গ্রহণ করুন
জ্বরের কারণে অনেক সময় ক্ষুধা কমে যায়। তবে শরীরকে সুস্থ করার জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সহজপাচ্য খাবার যেমন—ভাত, ডাল, স্যুপ, তাজা ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি রাখুন খাদ্যতালিকায়।
ভেষজ উপাদান যেমন আদা ও রসুন খুবই কার্যকর হতে পারে।
আদা: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়ক।
রসুন: এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত পরামর্শ:
যদি জ্বর কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা ১০১°F (প্রায় ৩৮.৩°C) এর বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শিশু, বৃদ্ধ বা যারা পূর্বে থেকেই কোনো রোগে আক্রান্ত, তাদের জ্বর হলে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি।
শেষ কথা:
জ্বর কোনো রোগ নয়, বরং শরীরের একটি প্রতিক্রিয়া। তাই ভয় না পেয়ে উপযুক্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য ও হাইড্রেশন নিশ্চিত করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, সুস্থ থাকুন!