ময়দা কি সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

ময়দা কি সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ময়দা একটি অতি সাধারণ উপাদান। বাড়ির রুটি-পারাঠা থেকে শুরু করে বাইরে খাওয়া পিৎজা, বিরিয়ানি, বিস্কুট বা কেক—সব জায়গাতেই ময়দার উপস্থিতি চোখে পড়ে। ব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচাতে আমরা প্রায়ই সহজে প্রস্তুত খাবারের দিকে ঝুঁকি, যার বেশিরভাগই ময়দা-নির্ভর। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ময়দা কি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী, না ক্ষতিকারক?

বিশেষজ্ঞরা বারবার ময়দা ব্যবহারে সচেতন হতে পরামর্শ দেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন পুষ্টিবিদরা ময়দা সম্পর্কে সতর্ক করেন:

১. ফাইবারের ঘাটতি
ময়দা একটি পরিশোধিত শস্যজাত খাদ্য। পরিশোধনের সময় এতে থাকা অধিকাংশ ফাইবার সরিয়ে ফেলা হয়। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই ময়দা বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফুলে থাকা ও অনিয়মিত মলত্যাগের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

২. রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়
ময়দার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি। অর্থাৎ, এটি শরীরে দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, ফলে খাবারের পরপরই রক্তে চিনির মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর। নিয়মিত ময়দা গ্রহণ ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. পুষ্টিহীন ক্যালোরি
ময়দা মূলত স্টার্চ বা শ্বেতসার, যা দ্রুত শক্তি দিলেও এতে নেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ বা ফাইবার। এর ফলে এটি “খালি ক্যালোরি” সরবরাহ করে, যা শরীরে পুষ্টিগুণ না বাড়িয়ে বরং বেড়েছে ক্যালোরির ভার।

৪. ওজন বৃদ্ধি ও চিনির প্রতি আকর্ষণ
ময়দা সহজেই হজম হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি করলেও সেই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই শক্তি কমে যায় এবং মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেটজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ আবারও অনুভব হয়। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া, একটানা ক্ষুধাবোধ ও ওজন বৃদ্ধি ঘটে। দীর্ঘমেয়াদে এটি মেটাবলিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৫. দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধিত ময়দা খাওয়ার সঙ্গে স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রোম এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সময় ময়দা ব্লিচ বা রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা হজমতন্ত্রে জ্বালাভাব বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তাহলে কি ময়দা একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত?
না, মাঝে মাঝে বা উৎসব-অনুষ্ঠানে ময়দা খাওয়া ক্ষতিকারক নয়। তবে এটি নির্ভর করে আপনি কী পরিমাণ এবং কত ঘন ঘন খাচ্ছেন। যদি আপনার খাদ্যাভ্যাস সার্বিকভাবে সুষম হয়—যেখানে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার, প্রোটিন ও ভিটামিন—তাহলে মাঝেমধ্যে ময়দা খাওয়া সমস্যা নয়।

কিন্তু সমস্যা হলো: যারা প্রতিদিন প্যাকেটজাত রুটি, পিৎজা, পাস্তা, নুডলস, বিস্কুট বা প্যাস্ট্রি জাতীয় ময়দা-নির্ভর খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপসংহার
ময়দা 100% খারাপ নয়, তবে নিয়মিত ও মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই খাদ্যে ময়দার ব্যবহার সীমিত রাখা, তার পরিবর্তে সুস্থ বিকল্প যেমন আটা, ওটস, বাদামি চাল বা ফাইবারসমৃদ্ধ শস্য গ্রহণ করা অধিক স্বাস্থ্যকর।

Read more

অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যেসব বিপদ আপনি ডেকে আনছেন

অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যেসব বিপদ আপনি ডেকে আনছেন

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে পিঠ ও কোমরের ব্যথা এখন এক সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে

By Editor