শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমিয়ে আনার কার্যকর উপায়

শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি কমিয়ে আনার কার্যকর উপায়

বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিনোদন—সব কিছুতেই এখন স্ক্রিনই ভরসা। ফলে শিশুদের মধ্যেও স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন এটি শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে একাগ্রতার অভাব, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা।

এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কিছু সচেতন পদক্ষেপ শিশুর স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। চলুন জেনে নেই কয়েকটি কার্যকর উপায়—

১. বইকে শিশুর সঙ্গী করে তুলুন
ছোটবেলা থেকেই বইয়ের সঙ্গে শিশুকে পরিচিত করে তুলুন। চার-পাঁচ মাস বয়স থেকেই শিশুদের জন্য তৈরি কাপড়ের বা শক্ত কাঠের বই পেতে পারেন। বড় ও রঙিন ছবিওয়ালা বই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সহজেই। শিশুদের সঙ্গে বসে গল্প করুন, বিভিন্ন চরিত্রে নাটকীয়ভাবে কথা বলুন—এতে তাদের কল্পনাশক্তি বাড়বে এবং ধীরে ধীরে বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে, যা তাদের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখতে সহায়ক হবে।

২. খেলা আর শরীরচর্চায় উৎসাহ দিন
নিয়মিত খেলাধুলা ও হালকা শরীরচর্চা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনে অন্তত এক ঘণ্টা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলে তারা প্রাকৃতিকভাবেই মোবাইল থেকে দূরে থাকবে। পার্কে নিয়ে যাওয়া, মাঠে খেলতে দেওয়া কিংবা বাসার ছাদে দৌড়-ঝাঁপ করার সুযোগ তৈরি করুন।

৩. পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করুন
৬ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুর দৈনিক ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে তাদের ঘুমের সময় কমে যায়, যা মনোযোগ ও মস্তিষ্কের গঠনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই নির্দিষ্ট সময় রাতে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। শোবার আগেই মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখার নিয়ম চালু করতে হবে।

৪. নজরদারি ও নিয়ম-কানুনে শৃঙ্খলা তৈরি করুন
অভিভাবক হিসেবে আপনাকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। ছোট ছোট নিয়মের মাধ্যমে শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন—

পড়ার সময় মোবাইল নিষিদ্ধ করা
খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ রাখা
শোবার ঘরে ফোন বা ট্যাব না নেওয়া
এই নিয়মগুলো শুধু স্ক্রিন টাইম-ই নয়, বরং পরিবারের মধ্যেও একটি শৃঙ্খলা ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলে।
৫. সামাজিক মেলামেশার সুযোগ করে দিন
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। খেলাধুলা, আঁকা, গান গাওয়া, হাতের কাজ ইত্যাদির প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। সামাজিক মেলামেশা শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায় এবং মোবাইল থেকে দূরে রাখে।

৬. বাড়ির কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহ দিন
ঘর গুছানো, রান্নাবান্নায় সহায়তা, নিজের খেলনা বা বইগুলি নিজে গুছিয়ে রাখা—এসব ছোট ছোট কাজে শিশুকে যুক্ত করুন। এতে করে তার সময় কাটবে গঠনমূলক উপায়ে এবং দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। এমন সব কাজে শিশুরা মজা পাবে, একঘেয়ে স্ক্রিন থেকে মন সরে যাবে।

৭. নিজে উদাহরণ হয়ে উঠুন
শুধু শিশুদের বললেই হবে না, পরিবারে বড়দেরও স্ক্রিন ব্যবহারে সংযমী হতে হবে। যদি বাবা-মা নিয়মিত মোবাইলে ভিডিও দেখে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকেন, তবে শিশুরাও সেই অভ্যাসই রপ্ত করবে। তাই আপনি নিজে যতটা সম্ভব বই পড়া বা পরিবার-centered কাজে মনোযোগ দিন।

শেষ কথা
শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে সচেতন অভিভাবকত্ব খুবই জরুরি। মোবাইল আসক্তি শিশুর একাগ্রতার অভাব, ঘুমের সমস্যা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলে ও সময়মতো সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সহজেই এই অভ্যাস পরিবর্তন সম্ভব। আপনার মনোযোগ ও ভালোবাসাই পারে তাকে সুস্থ ও সুন্দর শৈশব উপহার দিতে।

Read more

অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যেসব বিপদ আপনি ডেকে আনছেন

অফিসে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার যেসব বিপদ আপনি ডেকে আনছেন

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে পিঠ ও কোমরের ব্যথা এখন এক সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে

By Editor